বর্ষা নামলেই বাংলার বহু গ্রামের রাস্তার চিত্র যেন এক করুণ চেনা গল্প হয়ে ওঠে। কাদামাটি, হাঁটু জল, ভেঙে যাওয়া রাস্তার গর্ত—এসবই যেন বর্ষার সঙ্গেই একাকার হয়ে যায়। এবার সেই করুণ চিত্র আরও ভয়াবহভাবে প্রকাশ পেল বাঁকুড়ার ইন্দপুর ব্লকের বেলডাঙ্গা (Bankura) গ্রামে। এখানে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইল গোটা বাংলা, যা দেখে শিউরে উঠছেন সাধারণ মানুষ।
বেলডাঙ্গা গ্রামের (Bankura) এক অসুস্থ বৃদ্ধকে বুধবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু রাস্তায় জমে থাকা হাঁটুজল আর ভয়াবহ কাদা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কোনও অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা, চারচাকা গাড়িও সেই রাস্তায় ঢুকতে রাজি হয়নি। আর তাতেই বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীরা আশ্চর্য এক পথ বেছে নেন—দড়ির খাটিয়া বেঁধে তৈরি করেন ‘ডুলি’ (Bakura)। সেই ডুলিতে শুইয়ে, পায়ে হেঁটে তাঁরা রোগীকে প্রায় ৩ কিলোমিটার কাদা-পানির রাস্তা পার করে পৌঁছে দেন মূল সড়কে। তারপর সেখান থেকে শুরু হয় রোগীর হাসপাতালে যাত্রা।
এই ঘটনা ঘটে বাঁকুড়ার (Bankura) ইন্দপুর ব্লকের ব্রজরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নয়দা মোড় থেকে বেলডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত রাস্তায়। দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার পথজুড়ে কেবল বেলডাঙ্গা (Bankura) নয়, যাতায়াত করেন ধানসাত, ইলামবাজার, মল্লিকডিহি, নয়দা ও জনড়া গ্রামের মানুষজনও। সেই রাস্তা বহুদিন ধরেই ভয়াবহ বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। বর্ষায় জল জমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।
স্থানীয়দের (Bankura) দাবি, বহুবার প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরেও এই রাস্তা সারাইয়ের কোনও সদুত্তর পাননি তাঁরা। স্কুলপড়ুয়া থেকে দিনমজুর, গৃহবধূ থেকে অসুস্থ ব্যক্তি—সবাই এই রাস্তায় নিত্যদিন প্রাণ হাতে করে চলাফেরা করেন।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রতিবছর বর্ষায় এমন দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স না আসায় রোগীকে ‘ডুলি’ করে নিয়ে যাওয়ার এই ছবি নতুন করে মানুষের ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে বাংলার গ্রামে এখনও কেন পৌঁছায় না অ্যাম্বুলেন্স?
এই ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। মানুষ বলছেন, “নেতারা ভোট চাইতে আসেন, উন্নয়নের বুলি ঝাড়েন। কিন্তু অসুস্থ হলে ডুলিতে হাসপাতালে যেতে হয়! এ কেমন উন্নয়ন?”
প্রশাসনের নীরবতা এবং দীর্ঘদিনের অবহেলার ফলেই এমন পরিণতির দায় কে নেবে? এখন সকলের নজর একটাই—এই ঘটনার পরে প্রশাসন আদৌ নড়েচড়ে বসে কি না।