ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন রাত খুব কম এসেছে। চেপে থাকা শ্বাস, বৃষ্টিভেজা মাঠ, আর ৩০ হাজারের গর্জন (Shafali Verma)। আর সেই উত্তাল রাতে এক তরুণীর ‘ফিনিক্স’ হয়ে ওঠা। নাম তাঁর শেফালি বর্মা। বয়স মাত্র একুশ। আর তিনি লিখলেন এমন গল্প, যাকে ক্রিকেট-দেবতার ইচ্ছা না বলে উপায় নেই (Shafali Verma)।
কয়েক মাস আগেও হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন, শেষ হয়ে গিয়েছে শেফালি (Shafali Verma)। ওয়ানডে দলে জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন। সমালোচনা, ব্যঙ্গ, সন্দেহ— ছুরি ধারালো ছিল চারপাশে। কিন্তু শেফালি যে লড়াই করার জন্য জন্মেছেন, বিশ্বকাপ ফাইনালের আলোয় তা আবার প্রমাণ হল।
ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে ফাইনালের দিনে তাঁর চোখে ছিল আগুন (Shafali Verma)। পায়ে ছিল অদম্য বিশ্বাস। ব্যাট হাতে ৭৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংস — আক্রমণ, সংযম, পরিপক্কতা— সব একসঙ্গে। স্মৃতি মন্ধানার সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি গড়ে দিলেন এক ঐতিহাসিক প্ল্যাটফর্ম।
যেন সেহওয়াগের আত্মা তাঁকে বলছে — “নির্ভয়ে খেল।” এবং শেফালি (Shafali Verma) সেটাই করলেন।
কাহিনি এখানেই শেষ নয়। বল হাতে মাত্র ১৪ ওভার করেছিলেন জীবনে (Shafali Verma)। অথচ ফাইনালের রাতে ক্যাপ্টেন হারমনপ্রীত বল হাতে তুলে দিলেন তাঁকে। আর সেই মুহূর্তেই শেফালির চোখে যেন বিদ্যুৎ। সাত ওভারে ২ উইকেট। দারুণ স্পেল। প্রতিটা বল যেন বলছিল — “যদি ঈশ্বর পাশে থাকেন, কিছুই অসম্ভব নয়।”
সুনে লুইস, মারিজান ক্যাপ— দু’জন বড় ব্যাটারকে ফেরাতেই ম্যাচ পুরোপুরি ঘুরে গেল ভারতের দিকে। শেফালি তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছেন। সেদিন মাঠে তাঁর মনে হচ্ছিল, “এটা ঈশ্বরের কাজ।” পরে তিনিও স্বীকার করেছেন, ‘‘আমি জানতাম, ঈশ্বর আমাকে কোনও কাজের জন্য পাঠিয়েছে।’’
যেই দল তাঁকে একসময় বাদ দিয়েছিল, সেই দলকেই আজ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে শেফালি প্রমাণ করলেন— প্রতিভা যদি পরিশ্রম আর ধৈর্যের সঙ্গে মেলে, তবে ভাগ্যও মাথা নত করতে বাধ্য।
হরিয়ানার মেয়েটি গত এক বছরে দেশীয় ক্রিকেটে পাহাড় সমান রান করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ৩৪১ রান, ওয়ানডে-তে ৫২৭ রান— হাই স্ট্রাইক রেট, বিশাল গড়। চুপচাপ, আলো থেকে দূরে, নিজের ভিতরের আগুনে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। যেন ঠিক এই মুহূর্তের অপেক্ষাই ছিল।
ফাইনালে ব্যাট, বল, মাঠ— তিন জায়গাতেই ছড়িয়ে দিলেন নিজের আলো (Shafali Verma)। আর সেই আলোয় ভেসে গেল ভারতীয় ক্রিকেট। চোখে জল নিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন রোহিত শর্মাও। স্টেডিয়ামে শোনা গেল একটাই গর্জন— “শেফালি! শেফালি! শেফালি!”
আজ ভারত শুধু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়নি। ভারত দেখেছে, পড়ে গিয়ে আবার ওঠা কী জিনিস। সন্দেহের অন্ধকার ছিঁড়ে যেভাবে আলোয় ফিরলেন শেফালি, তা একদিন গল্প হবে। একদিন কন্যারা পড়ে বলবে— অসাধ্য বলে কিছু নেই।











