চিরযৌবনের (Anti-Ageing) পেছনে অন্ধ দৌড়! সেলিব্রিটিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অ্যান্টি-এইজিং ট্রেন্ড আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে, অভিনেত্রী শেফালি জরিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যুর পর। বলিউড ও হলিউড তারকাদের মাঝে বেড়ে চলা ‘চিরতরুণ’ (Anti-Ageing) থাকার চাপ অনেককেই ঠেলে দিচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসার দিকে—যার মূল ফসল হতে পারে একরাশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত!
২০০০ সালের শুরুর দিকে হলিউডে যখন চেহারার তারুণ্য (Anti-Ageing) ধরে রাখার প্রবণতা মাথাচাড়া দেয়, তখনই অ্যান্টি-এইজিং চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ শুরু হয়। ভারতীয় তারকারাও পিছিয়ে ছিলেন না। ক্যামেরা, সোশ্যাল মিডিয়া আর ফ্যান-ফলোয়ারের চাপ—সব মিলিয়ে ‘ফ্ললেস’ দেখতে চাওয়া যেন জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ডা. জ্যোতি আনেজা, লা গ্রেস লাক্সারি স্কিন ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা, জানালেন, আগে যেখানে এটি ছিল শুধুমাত্র সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ, এখন তা হয়ে উঠেছে পারফর্মেন্স ধরে রাখার প্রয়াস (Anti-Ageing)।
তবে, চিরযৌবনের কোনও জাদুকাঠি নেই—এ কথা স্পষ্ট করে দিলেন ডা. এপ্রিলতিম গোয়েল, কাটিস ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর কথায়, অ্যান্টি-এইজিং (Anti-Ageing) চিকিৎসা বা ওষুধ বয়ঃপ্রাপ্তি থামাতে পারে না, কেবলমাত্র কিছু বাহ্যিক লক্ষণ কমিয়ে দিতে পারে, যেমন বলিরেখা, ত্বক ঝুলে পড়া বা ক্লান্তিভাব। কিন্তু শরীরের প্রকৃত বয়স বদলানো যায় না। তিনি সতর্ক করে দেন, এই ধরনের অবাস্তব সৌন্দর্যের মানসিকতা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্বেগ, কম আত্মবিশ্বাস এবং শরীর নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়।
সেলিব্রিটিদের মধ্যে জনপ্রিয় অ্যান্টি-এইজিং (Anti-Ageing) চিকিৎসাগুলির মধ্যে রয়েছে—বোটক্স, ফিলার, লেজার থেরাপি, স্কিন বুস্টারস, প্রোফাইলো, এনসিটিএফ, এন্ডোলিফট, থ্রেড লিফট, হাইফু, আলথেরা। এর পাশাপাশি কোলাজেন, এনএডি+, গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন, রেটিনয়েড ক্রিম, পিআরপি এবং ভ্যাম্পায়ার ফেশিয়ালও ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন।
এছাড়াও, NAD IVs ও গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন এখন অনেকের মধ্যেই জনপ্রিয়, যা শরীরের কোষে শক্তি যোগাতে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তবে এই চিকিৎসার পেছনে বিপদের সম্ভাবনাও কম নয়। গ্লুটাথায়োন নিতে গেলে যদি পেট খালি থাকে, তবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, মাথা ঘুরতে পারে। NAD IV-এর ভুল ব্যবহার লিভারে চাপ, ক্লান্তিভাব বা বমির ভাব সৃষ্টি করতে পারে। বোটক্স ও ফিলার ভুলভাবে প্রয়োগ হলে হতে পারে চেহারার অসামঞ্জস্য, ‘ফ্রোজেন’ মুখাবয়ব বা চামড়ার ক্ষয়।
ডা. গোয়েল বিশেষভাবে সতর্ক করেন, অনেক সময় তারকারা বাড়িতে বা অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তির মাধ্যমে এই চিকিৎসা করান, যা মারাত্মক হতে পারে। হঠাৎ হৃদরোগ, অ্যালার্জি, কিডনি বা লিভার ড্যামেজ, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তিনি জানান, “ঘরোয়া IV ড্রিপ বা হাই ডোজ ভিটামিন ইনজেকশন কোনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া নিলে বিপদ অনিবার্য।”
সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রবণতা হলো—নিজেরাই ওষুধ খেয়ে ফেলা, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে। এখনকার প্রজন্ম NAD ড্রিপ, কোলাজেন বা গ্লুটাথায়োন নিজেরাই শুরু করছেন, এমনকি ২০ বছর বয়সেই! অথচ তাঁদের ত্বক বা শরীর এসবের প্রয়োজনে পৌঁছায়ইনি। ভারতীয় বাজারে এখনো এই ধরনের ইনজেকশন বা সাপ্লিমেন্টস-এর উপর নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট কঠোর নয়, অনেক কিছুই অনলাইন বা ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে বিক্রি হয় চিকিৎসক ছাড়াই।
ডা. আনেজা বলেন, “আপনার ত্বক বিজ্ঞানের যত্ন চায়, ভাইরাল ট্রেন্ড নয়।” তিনি আরও বলেন, “এটা স্পা ট্রিটমেন্ট নয়—অ্যান্টি-এইজিং একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা প্রক্রিয়া। সঠিক পদ্ধতিতে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এক কদমও নয়। নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টার করা মুখের সঙ্গে তুলনা করবেন না। আসল সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস থেকে আসে।”
সবশেষে, দুটি পরামর্শ বারবার উঠে এসেছে—চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন, আর জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে ত্বক ও শরীরের সুস্থতা বজায় রাখুন। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, পানীয় জল, সানস্ক্রিন ব্যবহার, এবং নিয়মিত ব্যায়াম—এই-ই চিরযৌবনের আসল চাবিকাঠি।