মার্কিন আদালতে এক ভারতীয় শিখ যুবকের পাগড়ি ছাড়া উপস্থিতি ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। ২১ বছরের জশানপ্রীত সিংহ (Jashanpreet Singh), যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার অভিযোগে গ্রেফতার, সম্প্রতি আদালতে হাজির হন মাথায় পাগড়ি ছাড়া অবস্থায়। আর সেই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিখ সম্প্রদায় এবং ভারতীয় নাগরিকরা। অনেকে একে শিখ ধর্মবিশ্বাসের অপমান বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ঘটনা ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনো কাউন্টির র্যাঞ্চো কুকামঙ্গা আদালতের। শুক্রবার প্রথমবার আদালতে হাজির হন জশানপ্রীত (Jashanpreet Singh), যিনি ইয়ুবা সিটির বাসিন্দা এবং ২০২২ সালে বেআইনি পথে ভারতে থেকে আমেরিকায় প্রবেশ করেছিলেন। অভিযোগ, ২১ অক্টোবর রাতে তাঁর ট্রাক হঠাৎই আটটি গাড়িকে ধাক্কা মারে, যাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের এবং আহত হন আরও চার জন। মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘gross vehicular manslaughter while intoxicated’ এবং ‘driving under the influence of drugs causing injury’ ধারায় অভিযুক্ত করেছে। তবে আদালতে তিনি (Jashanpreet Singh) সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার চেয়েও বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর (Jashanpreet Singh) পাগড়ি খুলে হাজির হওয়া নিয়ে। শিখদের কাছে পাগড়ি শুধুমাত্র ধর্মীয় চিহ্ন নয়, এটি তাঁদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তাই মার্কিন আদালতে জশানপ্রীতের মাথা খোলা ছবি সামনে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ভারতে। অনেকেই এই ঘটনাকে বলেছেন “শিখ ধর্মের অবমাননা”।
জশানপ্রীতের (Jashanpreet Singh) পরিবার থাকেন ভারতের মোগা জেলায়। তাঁর বাবা রবিন্দর সিংহ, যিনি নিজে একজন স্কুল বাস চালক, সংবাদমাধ্যমকে বলেন— “আমার ছেলে এক জন আমৃতধারী গুরশিখ। সে সারাজীবন শিখ ধর্মের নিয়ম মেনে চলেছে। ও কখনও মাদক ছুঁয়েও দেখেনি। এই অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। আমরা নিহতদের জন্য দুঃখিত, কিন্তু ওকে মাদকাসক্ত বলে দোষারোপ করা অন্যায়।”
বর্তমানে জশানপ্রীত সিংহ মার্কিন পুলিশের হেফাজতে আছেন, এবং জামিন অযোগ্য অপরাধে তাঁকে আটক রাখা হয়েছে। তাঁর প্রাথমিক শুনানি নির্ধারিত হয়েছে আগামী ৪ নভেম্বর।
অন্যদিকে, শিরোমনি অকালি দলের সভাপতি ও প্রাক্তন পঞ্জাব উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদল (Sukhbir Singh Badal) প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, “জশানপ্রীত একজন পরিশ্রমী যুবক। তাঁকে অন্যায়ভাবে মাদকাসক্ত বলে দোষারোপ করা হয়েছে। তাঁর পরিবার বলেছে, টক্সিকোলজি রিপোর্টে ভুল হয়েছে। আদালতে পাগড়ি ছাড়া হাজির করানো শিখ ধর্মীয় আস্থার উপর সরাসরি আঘাত।” তিনি বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে জশানপ্রীতের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত থাকে এবং তাঁকে ন্যায্য বিচার দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর থেকেই Change.org-এ একটি অনলাইন পিটিশন শুরু হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে জশানপ্রীতের পাগড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাঁকে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। পিটিশনে লেখা— “জশানপ্রীতের সঙ্গে আচরণ শুধু ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর আঘাত নয়, সমগ্র শিখ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মর্যাদার উপরও আক্রমণ।”
এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, “একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে, কিন্তু তাকে ধর্মীয় পরিচয় থেকে বঞ্চিত করা যায় না। আদালতের উচিত ন্যায়, সহানুভূতি এবং প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করা।”
ঘটনাটি এখন শুধুমাত্র একটি সড়ক দুর্ঘটনার মামলা নয়— এটি হয়ে উঠেছে ধর্মীয় অধিকার, পরিচয় ও মানবাধিকারের প্রশ্ন। মার্কিন আদালতে এক শিখ যুবকের মাথা খোলা ছবি দেখে উত্তপ্ত ভারত এখন একটাই দাবি তুলেছে— “জশানপ্রীতের ন্যায়বিচার হোক, এবং তাঁর পাগড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”






