নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী হওয়ার পর তীব্র বিতর্কে জড়ালেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক জোহরান মামদানি (Mamdani)। তাঁকে নিয়ে এখন মার্কিন রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা—যেখানে রিপাবলিকানরা শুধু তাঁর নাগরিকত্ব তদন্তের দাবি করছেন না, বরং কেউ কেউ তাঁর (Mamdani) মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করে তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করারও আহ্বান জানাচ্ছেন।
৩৩ বছর বয়সি মামদানি (Mamdani) বর্তমানে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির অ্যাস্টোরিয়া, কুইন্স-এর প্রতিনিধি। তিনি ২০১৮ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। এর আগে তিনি উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে আসেন। তাঁর মা মীরা নায়ার একজন প্রখ্যাত ভারতীয়-মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং বাবা মাহমুদ মামদানি এ(Mamdani) কজন খ্যাতনামা অধ্যাপক।
তাঁর বিজয়ের পর থেকেই ডানপন্থী মহলে শুরু হয়েছে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য এবং অভিযোগ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত উপদেষ্টা টম হোমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমরা স্যান্কচুয়ারি সিটিগুলোর বিরুদ্ধে দ্বিগুণ ও ত্রিগুণ হারে অভিযান চালাব। যদি জেল থেকে কাউকে ধরতে না পারি, তবে আমরা তাদের পাড়ায় বা কর্মস্থলে খুঁজে নেব। গেম অন—আমরা আসছি।”
টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস দাবি করেছেন, মামদানি (Mamdani) নাকি “ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গিদের সমর্থন গোপন করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন”—এই অভিযোগে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশনের কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
নিউইয়র্ক ইয়ং রিপাবলিকান ক্লাব—যার জন্ম ১৯১১ সালে—এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) একটি পোস্টে ‘অ্যাকশন’ চেয়ে লিখেছে, “র্যাডিক্যাল জোহরান মামদানিকে আমাদের প্রিয় নিউইয়র্ক শহর ধ্বংস করতে দেওয়া যাবে না।”
ট্রাম্পের প্রাক্তন স্টাফ স্টিফেন মিলার মন্তব্য করেছেন, “মামদানির জয় স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে কীভাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সমাজ বিপর্যস্ত হয়।” তিনি আরও বলেন, “তিনি এমন একজন সমাজতন্ত্রী যিনি অভিবাসন আইন প্রয়োগ ও কারাগার ব্যবস্থা পুরোপুরি বিলুপ্ত করতে চান।”
ট্রাম্পপন্থী কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারজোরি টেলর গ্রিন এক AI-তৈরি ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি-কে বোরখা পরিহিত অবস্থায় দেখানো হয়েছে। এক রেডিও সাক্ষাৎকারে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল সদস্য ভিকি প্যালাডিন মামদানিকে “জিহাদি সন্ত্রাসী” ও “কমিউনিস্ট” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে মামদানিকে “১০০% কমিউনিস্ট পাগল” বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র মন্তব্য করেছেন, “নিউইয়র্ক সিটি আর পড়ে গেছে, এখন এখানকার মানুষ ৯/১১-র মতো ট্র্যাজেডির পক্ষে ভোট দিচ্ছে।”
সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মামদানির ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে স্পষ্ট ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান। তাঁর এই অবস্থানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ইহুদি ও প্রো-ইসরায়েল গ্রুপ থেকে তীব্র সমালোচনা এসেছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে ‘হামাস-সহানুভূতিশীল’ তকমাও বসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, মামদানির সমর্থকরা তাঁকে নিউইয়র্ক শহরের জন্য এক নতুন প্রজন্মের সাহসী, প্রগতিশীল কণ্ঠস্বরে রূপে দেখছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে উঠে এসেছে শহরের বাসিন্দাদের জন্য প্রকৃত সমাধানের প্রতিশ্রুতি—যেমন সরকারি পরিচালিত মুদি দোকান, ভাড়া বৃদ্ধির উপর স্থগিতাদেশ, এবং বিনামূল্যে সিটি বাস সেবা। এসব বাস্তবায়নে তাঁর পরিকল্পনা, করপোরেট ও ধনীদের উপর ১০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত কর।
প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে মামদানির এই বিজয় নিউইয়র্ক রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।